দখলমুক্ত হচ্ছে না কক্সবাজার শহরের রাস্তা ও ফুটপাত

সাইফুল ইসলাম, কক্সবাজার জার্নাল •


কক্সবাজার শহরের অধিকাংশ রাস্তা ও ফুটপাতে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এবং অসাধু ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে। বাধ্য হয়ে পথচারিসহ পর্যটকেরা রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। এ কারণে সড়কে প্রতিনিয়তেই যানজটসহ ঘটেছে ছোট-বড় অসংখ্য দূর্ঘটনা।

এমনকি প্রাণ হারানোর ঘটনাও ঘটছে মাঝে মধ্যে। বিশেষ করে রাস্তার দুই পাশের্ব পার্কিং করে সিএনজি ও টমটম।

পৌরসভা ও প্রশাসনের নজরদারিতে মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও ১/২ দিনের ব্যবধানে আবারও ফুটপাত দখল করে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ও ব্যবসা ফেদে বসে তারা।

ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদে দাবি, তারা প্রত্যেকেই নাকি কিছু ব্যক্তিকে টাকা দিয়ে ফুটপাতে এই ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তাদের কাছ থেকে একটি সিন্ডিকেট এসে প্রতিদিনই ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সর্বনিম্ন ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১’শ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়াও দুই পাশের যেসব সিএনজি পার্কিং করে তাদের থেকেও প্রতিনিয়তেই টাকা নিয়ে থাকে বলে জানা গেছে

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ অক্টোবর (রবিবার) দুই পাশের্ব গাড়ি পার্কিসহ যত্রতত্র ভ্রম্যমান ব্যবসায়ীকে সরিয়ে যেতে মাইকিং করেছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও আসার পরপরেই ফের বসে যায় ওই সব ভ্রাম্যমান দোকানী। জনবল সংকট ও আর্থিক কারণে বারবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না প্রশাসনের। এরপরেও কয়েকদিনের মধ্যেই যারা রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে ব্যবসা আসছে তাদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে এডভোকেট শওকত বেলাল বলেন, শহরে ভিতরে রাস্তার পাশে যদি এভাবে যত্রতত্র গাডি পার্কিং ও ভ্রাম্যমান দোকান বসে যানজট এমনিতেই কমবে না এবং দিনদিন বাড়তে থাকবে। এতে প্রতিনিয়তেই কোন না কোন ভাবে দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ। একদিকে রাস্তার বেহাল দশা অন্যদিকে যত্রতত্র পার্কিংসহ ভ্রাম্যমান ব্যবসায়দের দখল, সব মিলিয়ে আমরা কখন রেহায় পাবো এসব যানজট থেকে।

গতকাল শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের প্রাণকেন্দ্র পৌরসভার সামনে প্রধান সড়কে খানাখন্দক ও পেছনে রাস্তার দু’ধারে ব্যবসায়িরা ফুটপাত দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও কক্সবাজার শহরের লালদীঘির পাড়ে উত্তর পাশের্ব সিএনজি পার্কিং ও যত্রতত্র ভ্রাম্যমান ব্যবসা, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিচে আদালত চত্বরের রাস্তার উপরে, পেট্রোল পাম্পের সামনে রাস্তার দু’ধারে, আইবিরোডের উপরে, কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন রাস্তার দুই পাশেসহ গোটা শহরজুড়ে প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে ভ্রাম্যমান দোকানীর সয়লাভের কারণে যানজট ও জনদূভোর্গ সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া যত্রতত্র ইজিবাইক ও রিক্সার কারনে রাস্তা সংকুচিত হয়ে যায়। এসব ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদের কারণে রাস্তার দু’ধার দিয়ে যেতে না পেরে বাধ্য হয়ে রাস্তার মাঝ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এদিকে রাস্তায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ও কাউন্টার কারণেও যানজট লেগেই থাকে।

জানা যায়, গাড়ি পার্কিংয়ের সুনির্দিষ্ট জায়গা থাকার পরেও নিয়ম না মেনে নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য কটেজ ও হোটেলের সামনে গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে। অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিংয়ের ফলে একশ্রেণীর লোকজন লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পর্যটক ও স্থানীয় লোকজন।

অব্যবস্থাপনার কারনে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটক ও পথচারীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। এভাবে চলতে থাকলে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সুনাম ক্ষুন্ন হবে বলে জানান, স্থানীয় লোকজন ও বেড়াতে আসা পর্যটকরা।

মো. রহিম উল্লাহ নামে এক কটেজ ম্যানেজার জানান, কটেজ ও হোটেলের সামনে বাস বা কার পার্কিং করায় পর্যটকদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। এবং পর্যটন নগরীর সৌন্দযর্যও ব্যাঘাত ঘটছে।

ফরিদপুর থেকে আসা পর্যটক বাবুল খন্দকার জানান, একদিকে কটেজ ও হোটেল এর সামনে গাড়ি পার্কিং অন্যদিকে রাস্তার আশপাশে ভ্রাম্যমান দোকানীর কারণে সড়কের মধ্যে যানজট লেগে থাকে। এতে একটি বিরক্তিকর বিষয় হয়ে দাড়াচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। সবদিকে ভালো লাগলেও রাস্তায় চলাচলে চরম বিরক্তিকর হয়ে উঠছে।